• আসসালামু আলাইকুম | পবিত্র রমজান মোবারক | নামাজ ও হাদীস সঠিক ভাবে জানার জন্য তৈরী বাংলা ব্লগ সাইট ।

ইদ্দত

এই পোষ্টটি সংরক্ষণ করা অথবা পরে পড়ার জন্য
বাটনে ক্লিক করুন ।
.

স্ত্রী তালাক প্রাপ্তা হলে বা তার স্বামীর মৃত্যু হলে যে সময়ের জন্য উক্ত স্ত্রীকে এক বাড়ীতে থাকতে হয়, অন্যত্র যেতে পারে না বা অন্য কোথাও বিবাহ বসতে পারে না তাকে “ইদ্দত” বলে।

শাব্দিক অর্থ

ইদ্দত শব্দটি আরবি (আরবি: عدة )। আভিধানিক অর্থ হলো- গণনা করা বা গণনাকৃত। মহিলাদের ইদ্দত হলো- ঐ সকল দিন, যেগুলো অতিবাহিত হলে তার জন্য বিবাহ করা হালাল হয়ে যায়। 

ইতিহাস

জাহিলিয়্যাতের যুগে একটি ব্যাপক প্রচলন ছিল, যদি কারো স্ত্রীর উপর রাগ হতো- ফলাফল ও পরিণতির দিকে লক্ষ্য না করে এক নিশ্বাসে শুধু তিনিই নয় হাজার তালাক দিয়ে, স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দিতো। এই পদ্ধতির তালাকের কারণে স্ত্রী, স্বামী এবং সন্তানদের যেই ক্ষতিকর পরিস্থিতির উপর পরতে হতো তার দিকে লক্ষ্য করে ইসলাম এই নীতি বলে দিয়েছে, যদি তালাক দিতেই হয় তাহলে যেন ইদ্দতের হিসাব অনুযায়ী দেয় এবং ইদ্দত গণনা করে রাখে।

কারণ

এই ইদ্দতের সময়কাল গণনা রাখা স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

স্ত্রীর জন্য

স্ত্রীর জন্য আবশ্যক হলো ইদ্দতের সময়কালে তিনি অন্য পুরুষের সাথে বিবাহে বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। এই কারণে স্বামী যদি ইদ্দতের সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে পুনরায় নিজের কাছে রাখার ইচ্ছাপোষণ করে তাহলে সে রাখতে পারবে। ইদ্দতের সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে এই অধিকারটি বিলুপ্ত হবে। ( বি.দ্র. এই বিষয়টি শুধু মাত্র এক তালাক ও দুই তালাকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিন তালাক দিয়ে ফেললে এই অধিকার আর থাকে না।)

স্বামীর জন্য

তালাক দেওয়ার পরে যদি সে ঐ মহিলার বোনকে বিয়ে করতে চায় তবে ইদ্দতের পরে সে করতে পারে। স্বামী যদি তার চতুর্থ স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং তার তিনটি স্ত্রী থাকে তবে সে স্ত্রীর ইদ্দত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আর বিয়ে করতে পারবে না। ইদ্দত শেষ হলে করতে পারে । উপরন্তু, এই সময়ের মধ্যে এটি জানা যায় যে স্ত্রী যদি গর্ভবতী,তাহলে স্ত্রীর গর্ভাবস্থার শেষ অবধি অবধি অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে না।ইদ্দতের সময়ে পুরুষটি মহিলার প্রসূতি এবং তার বাসস্থান সহ যাবতীয় খরচ বহন করবে।

ইদ্দতের সময় ইসলামের বিধান

ইদ্দতের সময়কালে, স্বামীর জন্য স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার কোনও অধিকার নেই। স্ত্রীর জন্যও স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া জায়েজ নয়। বরং একটি বাড়িতে একসাথে থাকবে যাতে পারস্পরিক সমঝোতার ও মনমালিন্যতা দূর হওয়ার যেন অবকাশ থাকে। আর ‍উভয়ে এক বাড়িতে থাকলে এটা সহজ হবে। বিবাহবিচ্ছেদ একটি বাধ্যবাধকতা, তবে বৈধ বিষয়গুলির মধ্যে এটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় বিষয়। এর কারণেই, তিনি তার বান্দাদেরকে রক্ষা করার জন্য বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ইদ্দতের শর্ত আরোপ করেছেন। স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে একই বাড়িতে থাকার প্রয়োজন, যাতে তারা উভয়ে ধীর স্থিরভাবে,ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারে, শেষ পদক্ষেপটি নেওয়ার আগে নিজেদের স্থির করতে পারে। বিবাহ বিচ্ছেদের পরিবর্তে কোন সংশোধন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না তা যেন ভাবতে পারে। তবে স্ত্রীর আবশ্যকীয় প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে পারবে ।

বিধবার ইদ্দতের সময় করণীয়

বিধবার ইদ্দতের সময় কী কী বিষয়ের উপর শরীয়তের দিকনির্দেশনা রয়েছে তা নিয়ে বহু ভুল বোঝাবুঝি জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পরেছে। তাদের নিজস্ব নিষেধাজ্ঞাকে শরীয়াহর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। বিধবার ইদ্দতের সময় শরিয়াহ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

১। বিধবা তার স্বামীর মৃত্যুর পর চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করবে। ইতিমধ্যে তার উচিত তার স্বামীর বাড়িতে থাকা এবং প্রয়োজন ব্যতিরেকে বাড়ির বাইরে না যাওয়া। অবশ্য গরীব হলে এবং বাইরে গিয়ে কাজকর্ম ব্যতিরেকে খাওয়া পরার ব্যবস্থা না থাকলে দিনের বেলায় কাজের জন্য বাইরে যেতে পারবে, কিন্তু রাতের বেলায় সে বাড়ীতেই থাকতে হবে। বাড়ীতে নিজেদের একাধিক ঘর বা একাধিক কামরা থাকলে যে কোন ঘর বা কামরায় থাকতে পারবে। নির্দিষ্ট একটি স্থানেই আবদ্ধ থাকা জরুরী নয়। বাড়ির বারান্দা বা উঠানেও বের হতে পারবে।

২। স্ত্রী গর্ভপতী হলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত তার ইদ্দত পালন করতে হবে।

৩। ইদ্দতের সময় তার সাধারণ পোশাক পরা উচিত এবং সাজসজ্জা এড়ানো উচিত। মেক-আপ, গহনা এবং জাকজমকপূর্ন পোশাক না পরা উচিত। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সে অপরিচ্ছন্ন থাকবে।

৪। ইদ্দতের সময়ে স্পষ্ট নতুন বিবাহের প্রস্তাব না দেওয়া উচিত। তবে ইশারা ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেওয়া যাবে। স্পষ্ট আকারে প্রস্তাব দেওয়া যাবে না।

৫। স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পেতে দেরী হলে সংবাদ পাওয়ার পূর্বে যে সময় অতিবাহিত হয়েছে সেটাও ইদ্দতের ভিতর অতিবাহিত হয়েছে বলে ধরা হবে আর ইদ্দতের পূর্ণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সংবাদ পেলে আর তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে- তার ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেছে বলে ধরা হবে।

৬। স্বামীর মৃত্যু চাঁদের প্রথম তারিখে হলে চাঁদের হিসেবে চার মাস দশ দিন ধরা হবে। আর চাঁদের প্রথম তারিখ ছাড়া অন্য যে কোন তারিখে মৃত্যু হলে ৩০ দিনের চার মাস এবং তারপর ১০দিন অর্থাৎ ১৩০ দিন ইদ্দত পালন করবে।

ইদ্দতের প্রকারভেদ

ইদ্দত সাত ধরণের-

  • তালাকের ইদ্দত
  • মৃত্যুর ‍ইদ্দত
  • সন্দেহের ইদ্দত
  • মিসয়ার ইদ্দত
  • মুতআ’র ইদ্দত
  • তাযকিয়ার ইদ্দত
  • গর্ভাবস্থার ইদ্দত

পালনকারী হিসেবে ইদ্দত ১৫ প্রকার।

  • বিবাহিত কুমারীর ইদ্দত
  • বিধবার ইদ্দত
  • গর্ভবতীর ইদ্দত
  • বাদীর ইদ্দত
  • আবৃত্তির সময়কাল
  • পুরুষের ইদ্দত
  • স্বামী হারিয়ে যাওয়া স্ত্রীর ইদ্দত
  • অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুর ইদ্দত
  • ঋতুবতী নয় এমন মহিলার ইদ্দত
  • সাধারণ মহিলার ইদ্দত
  • .মাকতু’ হায়েযের ইদ্দত
  • বায়িন তালাকের (পরিপূর্ণ বিচ্ছেদের) ইদ্দত।
এই পোষ্টের কোন তথ্য আপনার ভুল মনে হলে , অবশ্যই প্রমান সহকারে কমেন্ট করুন । সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।


*


- .

নামাজ বিষয়ে যে কোন প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন !