• আসসালামু আলাইকুম | পবিত্র রমজান মোবারক | নামাজ ও হাদীস সঠিক ভাবে জানার জন্য তৈরী বাংলা ব্লগ সাইট ।

সূরা আল-ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ

এই পোষ্টটি সংরক্ষণ করা অথবা পরে পড়ার জন্য
বাটনে ক্লিক করুন ।
.

সূরা আল ফাতিহা (আরবি: سورة الفاتحة‎‎) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের প্রথম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৭ এবং রুকু সংখ্যা ১। ফাতিহা শব্দটি আরবি “ফাতহুন” শব্দজাত যার অর্থ “উন্মুক্তকরণ”। এটি আল্লাহ্ এর পক্ষ থেকে বিশেষ প্রতিদান স্বরূপ। সূরা ফাতিহা অন্যান্য সূরার ন্যায় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে শুরু হয়েছে। আল ফাতিহা সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে বিধায় মক্কী সূরা হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। সূরা ফাতিহাকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়া যায় না বলে একে অখণ্ড সূরা নামেও ডাকা হয়।

 بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

👉 বিসমিল্লাহির রাহ্ মানির রাহিম

বাংলা অনুবাদ: পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহের নামে।

ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَالَمِينَ

👉 আলহামদুলিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন।

বাংলা অনুবাদ: সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহের জন্যে।

ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

👉 আর রাহ মা-নির রাহীম।

বাংলা অনুবাদ: অনন্ত দয়াময়, অতীব দয়ালু।

مَالِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ

👉 মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন।

বাংলা অনুবাদ: ন্যায় দিবসের মালিক।

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

👉 ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাছতা’ঈন।

আমরা শুধু আপনারই দাসত্ব করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য কামনা করি।

ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ

👉 ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম।

বাংলা অনুবাদ: আমাদের সরল পথনির্দেশ দান করুন।

صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا ٱلضَّالِّينَ

👉 সিরা-তাল্লাযীনা আন’আম তা’আলাইহীম। গাইরিল মাগদূ বি’আলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন। আমিন

বাংলা অনুবাদ: তাদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন, এবং তাদের পথে নয় যারা আপনার ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট, আমীন

নামকরণ

এ সূরার বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এর এই নামকরণ করা হয়েছে। যার সাহায্যে কোন বিষয়, গ্রন্থ বা জিনিসের উদ্বোধন করা হয় তাকে ‘ফাতিহা’ বলা হয়। অন্য কথায় বলা যায়, এ শব্দটি ভূমিকা এবং বক্তব্য শুরু করার অর্থ প্রকাশ করে।

হাদিসে এ সুরার আরও চারটি নাম পাওয়া যায় যার একটি হলো উম্মুল । তবে ইসলািমী লেখালিখিতে এ সুরার অন্ততঃ ২৩ অভিধা রয়েছে।একে সাবআ মাসানী বা বহুল পঠিত সাত আয়াত বলা হয়

নাযিল হওয়ার সময়-কাল

এটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের একেবারেই প্রথম যুগের সূরা। বরং হাদীসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটিই মুহাম্মাদের ওপর নাযিলকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। এর আগে মাত্র বিচ্ছিন্ন কিছু আয়াত নাযিল হয়েছিল। সেগুলো সূরা ‘আলাক্ব’, ‘মুয্‌যাম্‌মিল’ ও ‘মুদ্‌দাস্‌সির’ ইত্যাদিতে সন্নিবেশিত হয়েছে।

বিষয়বস্তু

আসলে এ সূরাটি হচ্ছে একটি দোয়া। যে কোন ব্যক্তি এ গ্রন্থটি পড়তে শুরু করলে আল্লাহ প্রথমে তাকে এ দোয়াটি শিখিয়ে দেন। গ্রন্থের শুরুতে এর স্থান দেয়ার অর্থই হচ্ছে এই যে, যদি যথার্থই এ গ্রন্থ থেকে তুমি লাভবান হতে চাও, তাহলে নিখিল বিশ্ব-জাহানের মালিক আল্লাহর কাছে দোয়া এবং সাহায্য প্রার্থনা করো।

মানুষের মনে যে বস্তুটির আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা থাকে স্বভাবত মানুষ সেটিই চায় এবং সে জন্য দোয়া করে। আবার এমন অবস্থায় সে এই দোয়া করে যখন অনুভব করে যে, যে সত্তার কাছে সে দোয়া করছে তার আকাংখিত বস্তুটি তারই কাছে আছে। কাজেই কুরআনের শুরুতে এই দোয়ার শিক্ষা দিয়ে যেন মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সত্য পথের সন্ধান লাভের জন্য এ গ্রন্থটি পড়, সত্য অনুসন্ধানের মানসিকতা নিয়ে এর পাতা ওলটাও এবং নিখিল বিশ্ব-জাহানের মালিক ও প্রভু আল্লাহ হচ্ছেন জ্ঞানের একমাত্র উৎস— একথা জেনে নিয়ে একমাত্র তার কাছেই পথনির্দেশনার আর্জি পেশ করেই এ গ্রন্থটি পাঠের সূচনা কর।

এ বিষয়টি অনুধাবন করার পর একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, কুরআন ও সূরা ফাতিহার মধ্যকার আসল সম্পর্ক কোন বই ও তার ভূমিকার সম্পর্কের পর্যায়ভুক্ত নয়। বরং এ মধ্যকার আসল সম্পর্কটি দোয়া ও দোয়ার জবাবের পর্যায়ভুক্ত। সূরা ফাতিহা বান্দার পক্ষ থেকে একটি দোয়া। আর কুরআন তার জবাব আল্লাহর পক্ষ থেকে। বান্দা দোয়া করে, হে মহান প্রভু! আমাকে পথ দেখাও। জবাবে মহান প্রভু এই বলে সমগ্র কুরআন তার সামনে রেখে দেনঃ এই নাও সেই হিদায়াত ও পথের দিশা যে জন্য তুমি আমার কাছে আবেদন জানিয়েছ।

বৈশিষ্ট্য

এই সূরাটি কোরআনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূরা। প্রথমতঃ এ সূরা দ্বারাই পবিত্র কোরাআন আরম্ভ হয়েছে এবং এ সূরা দিয়েই সর্বশ্রেষ্ঠ এবাদত স্বলাত আরম্ভ হয়। যে সকল সাহাবী সূরা আল-ফাতিহা সর্বপ্রথম নাযিল হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন, তাদের সে বক্তব্যের অর্থ বোধহয় এই যে, পরিপূর্ণ সূরারূপে এর আগে আর কোন সূরা নাযিল হয়নি। এ জন্যই এ সূরার নাম ‘ফাতিহাতুল-কিতাব’ বা কোরআনের উপক্রমণিকা রাখা হয়েছে।

‘সূরা আল্-ফাতিহা’ এদিক দিয়ে সমগ্র কোরআনের সার-সংক্ষেপ। এ সূরায় সমগ্র কোরআনের সারমর্ম সংক্ষিপ্ত আকারে বলে দেয়া হয়েছে। কোরআনের অবশিষ্ট সূরাগুলো প্রকারান্তরে সূরা ফাতিহারই বিস্তৃত ব্যাখ্যা। তাই এ সূরাকে সহীহ হাদীসে ‘উম্মুল কিতাব’, ‘উম্মুল কুরআন’, ‘কোরানে আযীম’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে।[২] হযরত রসূলে কারীম এরশাদ করেছেন যে –

“যার হাতে আমার জীবন-মরণ, আমি তাঁর শপথ করে বলছি, সূরা আল-ফাতিহার দৃষ্টান্ত তাওরাত, ইনজীল, যাবুর প্রভৃতি অন্য আসমানী কিতাবে তো নেই-ই, এমনকি পবিত্র কোরআনেও এর দ্বিতীয় নেই।”

ইমাম তিরমিযী আবু হুরাইরাহ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলে কারীম আরো বলেছেন যে –

“সূরায়ে ফাতিহা প্রত্যেক রোগের ঔষধবিশেষ।”

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

এ সূরার প্রথম ও তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ্‌র গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে আর-রাহমান ও আর-রাহীম উল্লিখিত হয়েছে। রহম শব্দের অর্থ হচ্ছে দয়া, অনুগ্রহ। এই ‘রহম’ ধাতু হতেই ‘রহমান’ ও ‘রহীম’ শব্দদ্বয় নির্গত হয়েছে। ‘রহমান’ শব্দটি আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারও জন্য ব্যবহার করা জায়েয নেই। অন্যদিকে ‘রহীম’ সৃষ্টজগতের কারও কারও গুণ হতে পারে। তবে আল্লাহ্‌র গুণ হলে সেটা যে অর্থে হবে অন্য কারও গুণ হলে সেটা একই অর্থে হবে না।

সূরাটির দ্বিতীয় আয়াতে আল-হামদু কথাটি আশ-শুক্-র্ থেকে অনেক ব্যাপক, যা আধিক্য ও পরিপূর্ণতা বুঝায়। ‘আশ-শুক্-র্ লিল্লাহ’ বলার অর্থ হতো এই যে, আমি আল্লাহ্‌র যে নিয়ামত পেয়েছি, সেজন্য আল্লাহ্‌র শুকরিয়া আদায় করছি। অপরদিকে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ এর সম্পর্ক শুধু নিয়ামত প্রাপ্তির সাথে নয়।[১] মানুষ যখন আল্লাহ্‌ ছাড়া অপর কারো গুণ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে তার প্রশংসা করতে শুরু করে, তখন মানুষ তার ভক্তি-শ্রদ্ধার জালে বন্দী হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত সে মানুষের দাসত্ব ও মানুষের পূজা করতে আরম্ভ করে। এই অবস্থা মানুষকে শিরকের পথে পরিচালিত করতে পারে। সে জন্য যাবতীয় ‘হামদ’ একমাত্র আল্লাহ্‌র জন্যই করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে।

সৃষ্টিজগতকে আলাম এবং বহুবচনে আলামীন বলা হয়। সূরা আশ-শু’আরার ২৩-২৪ আয়াতদুটিতে বলা হয়েছে,

“ফিরআউন বলল: রাব্বুল আলামীন কি? মূসা বললেন: যিনি আকাশসমূহ-ভূপৃষ্ঠ এবং এ দু’টির মধ্যবর্তী সমস্ত জিনিসের রব।”

রব হচ্ছেন যিনি সৃষ্টি করা, প্রতিটি জিনিসের পরিমাণ নির্ধারণ করা, পথ প্রদর্শন ও আইন বিধান দেওয়া, লালন-পালন করা, রিযিক্‌ দান করা, জীবনদান করা, মৃত্যু প্রদান করা, সন্তান দেয়া, আরোগ্য প্রদান করা ইত্যাদি সবকিছু করার ক্ষমতা রাখেন। চতুর্থ আয়াতে আল্লাহ্‌কে ‘বিচার দিনের মালিক’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বিচার দিন সম্পর্কে সূরা আল-ইনফিতারের ১৭-১৯ নং আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে,

“আর কিসে আপনাকে জানাবে প্রতিদান দিবস কী? তারপর বলি, কিসে আপনাকে জানাবে প্রতিদান দিবস কী? সেদিন কোনো মানুষ অন্য মানুষের জন্য কোনো কিছুর ক্ষমতা রাখবে না। আর সেদিন সকল বিষয় হবে আল্লাহর কর্তৃত্বে।”

পঞ্চম আয়াতে আল্লাহ ছাড়া অন্যসব উপাস্যের ইবাদাত করা ও সেগুলোর কাছে সাহায্য চাওয়াকে অস্বীকার করা হয়েছে। ইবাদত হল ভয়-ভীতি, আশা-আকাঙ্খার সাথে সেইসব কথা বা কাজ সম্পাদন করা, যা আল্লাহ পছন্দ করেন ও যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন। যেসব কথা ও কাজে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন তা থেকে বিরত থাকাও ইবাদাত। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা অথবা কারো কাছে অলৌকিক সাহায্য কামনা করা শির্ক হিসেবে গণ্য হয়।

সূরাটির ষষ্ঠ আয়াতে হিদায়াত চাওয়া হয়েছে। স্নেহ ও করুণা এবং কল্যাণ কামনাসহ কাউকে মঙ্গলময় পথ দেখিয়ে দেয়া ও মনজিলে পৌঁছিয়ে দেয়াকে আরবী পরিভাষায় হিদায়াত বলে। ‘হিদায়াত’ শব্দটির দুইটি অর্থ। একটি পথ প্রদর্শন করা, আর দ্বিতীয়টি লক্ষ্য স্থলে পৌঁছিয়ে দেয়া। সিরাত শব্দের অর্থ হচ্ছে রাস্তা বা পথ। আর মুস্তাকীম হচ্ছে, সরল সোজা।

সূরাটির শেষ আয়াত এর পূর্বের আয়াতের ‘সরলপথ’-এর ব্যাখ্যা।

সূরা আল-ফাতিহার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ্‌র প্রশংসার বর্ণনা করা হয়েছে এবং প্রশংসার সাথে সাথে ঈমানের মৌলিক নীতি ও আল্লাহ্‌র একত্ববাদের বর্ণনাও সূক্ষভাবে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় আয়াতে এর দু’টি শব্দে প্রশংসার সাথে সাথে কিয়ামত ও পরকালের কথা বলা হয়েছে। চতুর্থ আয়াতের এক অংশে প্রশংসা এবং অপর অংশে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়েছে। مَـالِكِ يَوْمِ الدِّينِ – এর মধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মানুষ পরকালেও আল্লাহ্‌র মুখাপেক্ষী। প্রতিদান দিবসে আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো সাহায্য পাওয়া যাবে না। একজন বুদ্ধিমান ও বিবেকবান ব্যক্তি মনের গভীরতা থেকেই এ স্বতঃস্ফুর্ত স্বীকৃতি উচ্চারণ করছে যে, আমরা তোমাকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করি না। এ মৌলিক চাহিদাই إِيَّاكَ نَعْبُدُ তে বর্ণনা করা হয়েছে। অভাব পূরণকারী একক সত্তা আল্লাহ্‌, সুতরাং নিজের যাবতীয় কাজে সাহায্যও তার নিকট প্রার্থনা করবে। এ মৌলিক চাহিদাই বর্ণনা وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ -এ করা হয়েছে। মোটকথা, এ চতুর্থ আয়াতে একদিকে আল্লাহ্‌র প্রশংসার সাথে একথারও স্বীকৃতি রয়েছে যে, ইবাদত ও শ্রদ্ধা পাওয়ার একমাত্র তিনিই যোগ্য। অপরদিকে তার নিকট সাহায্য ও সহায়তার প্রার্থনা করা এবং তৃতীয়তঃ আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করার শিক্ষাও দেয়া হয়েছে। শেষ তিনটি আয়াতে মানুষের দোয়া ও আবেদনের বিষয়বস্তু এবং এক বিশেষ প্রার্থনা পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়েছে।

এই পোষ্টের কোন তথ্য আপনার ভুল মনে হলে , অবশ্যই প্রমান সহকারে কমেন্ট করুন । সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

Leave a comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।


*


- .

নামাজ বিষয়ে যে কোন প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন !