সূরা আল-মুলক বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বাংলা অনুবাদ: পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ67.1
তাবারাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলকু ওহু হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িং কাদীর।
বাংলা অনুবাদ: বরকতময় তিনি যার হাতে সর্বময় কর্তৃত। আর তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ67.2
আল্লাযী খলাকাল্ মাওতা ওয়াল্ হাইয়া-তা লিইয়াব্লুয়াকুম্ আইয়্যুকুম্ আহছানু ‘আমালা-; অহুওয়াল্ ‘আযীযুল্ গাফূর।
বাংলা অনুবাদ: যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।
الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا مَا تَرَى فِي خَلْقِ الرَّحْمَنِ مِنْ تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَى مِنْ فُطُورٍ67.3
আল্লাযী খলাকা ছাব্‘আ সামাওয়াতিন ত্বিবা-ক্বান-; মা তার ফী খালক্বির রহমানি মিন তাফাউত। ফারজিয়িল বাছারা হাল তার মিন ফুতূর।
বাংলা অনুবাদ: যিনি সাত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোন অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি?
ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَهُوَ حَسِيرٌ 67.4
বাংলা অনুবাদ: অতঃপর তুমি দৃষ্টি ফিরাও একের পর এক, সেই দৃষ্টি অবনমিত ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ67.5
ওয়া লাক্বাদ যাইয়ান্নাস্ সামাআদ দুনইয়া-বিমাছা-বীহা ও জাআ’লনাহা রুজুমাল লিশ শাইয়া ত্বীনি ওয়া আ‘তাদনা লাহুম ‘আযাবাস সায়ীর।
বাংলা অনুবাদ: আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপপঞ্জু দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আযাব।
وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ67.6
ওয়ালিল্লাযীনা কাফারূ বিরব্বিহিম ‘আযাবু জাহান্নাম, ওয়া বিসাল মাছীর।
বাংলা অনুবাদ: আর যারা তাদের রবকে অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। আর কতইনা নিকৃষ্ট সেই প্রত্যাবর্তনস্থল!
إِذَا أُلْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُ67.7
ইযা য় উলকূ ফীহা- সামিউ লাহা শাহীকাওঁ ওয়া হিয়া তাফূর।
বাংলা অনুবাদ: যখন তাদেরকে তাতে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা তার বিকট শব্দ শুনতে পাবে। আর তা উথলিয়ে উঠবে।
تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ67.8
তাকাদু তামাইয়্যাযু মিনাল গাইযি, কুল্লামা উলকিয়া ফীহা ফাওজুন সাআলাহুম খাযানাতুহা আলাম ইয়া তিকুম নাযীর।
বাংলা অনুবাদ: ক্রোধে তা ছিন্ন ভিন্ন হবার উপক্রম হবে। যখনই তাতে কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তার প্রহরীরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘তোমাদের নিকট কি কোন সতর্ককারী আসেনি’?
قَالُوا بَلَى قَدْ جَاءَنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا فِي ضَلَالٍ كَبِيرٍ 67.9
ক্বালু বালা ক্বাদ জা-আনা নাযীর; ফাকাযযাবনা ওয়া কুলনা মা নাযযালাল্লাহু মিন শাইয়্যিন ইন আনতুম ইল্লা ফী দ্বালালিন কাবীর।
বাংলা অনুবাদ: তারা বলবে, ‘হ্যা, আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল। তখন আমরা (তাদেরকে) মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা তো ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছ’।
وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ67.10
ওয়া ক্বালু লাও কুন্না নাসমাউ আও না’ক্বিলু মাকুন্না ফী আছহাবির সাইর।
বাংলা অনুবাদ: আর তারা বলবে, ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা বুঝতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসীদের মধ্যে থাকতাম না’।
فَاعْتَرَفُوا بِذَنْبِهِمْ فَسُحْقًا لِأَصْحَابِ السَّعِيرِ67.11
ফা’তারাফূ বিযাম্বিহিম ফাসুহক্বাল লি আছহাবিছ ছায়ীর।
বাংলা অনুবাদ: অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। অতএব ধ্বংস জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসীদের জন্য।
إِنَّ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ67.12
ইন্নাল্লাযীনা ইয়াখশাওনা রব্বাহুম বিল গাইবি লাহুম মাগফিরাতুওঁ ওয়া আযরুন কাবীর।
বাংলা অনুবাদ: নিশ্চয় যারা তাদের রবকে না দেখেই ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বড় প্রতিদান।
وَأَسِرُّوا قَوْلَكُمْ أَوِ اجْهَرُوا بِهِ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ67.13
ওয়া আছীররু ক্বাওলাকুম আবিজহারু বিহী; ইন্নাহূ আলীমুম বিযাতিছ ছুদূর।
বাংলা অনুবাদ: আর তোমরা তোমাদের কথা গোপন কর অথবা তা প্রকাশ কর, নিশ্চয় তিনি অন্তরসমূহে যা আছে সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ67.14
আলা ইয়া’লামু মান খলাক্বা; ওয়া হুয়াল লাতীফুল খাবীর।
বাংলা অনুবাদ: যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষদর্শী, পূর্ণ অবহিত।
هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُولًا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِنْ رِزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ 67.15
হুওয়াল্লাযী জাআ’লা লাকুমুল্ আরদ্বা যালুলান ফামশু ফী মানাকিবিহা ওয়া কুলূ মির রিযক্বিহী ওয়া ইলাইহিন নুশুর।
বাংলা অনুবাদ: তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিয্ক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।
أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ67.16
আ-আমিনতুম মান ফিস সামায়ি আইঁইয়াখসিফা বিকুমুল আরদ্বা ফাইযা হিয়া তামূর।
বাংলা অনুবাদ: যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের সহ যমীন ধসিয়ে দেয়া থেকে কি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছ, অতঃপর আকস্মিকভাবে তা থর থর করে কাঁপতে থাকবে?
أَمْ أَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ67.17
আম আমিনতুম মান ফিসছামায়ি আইঁইউরছিলা ‘আলাইকুম হাছিবান ফাসাতা’লামূনা কাইফা নাযীর।
বাংলা অনুবাদ: যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের উপর পাথর নিক্ষেপকারী ঝড়ো হাওয়া পাঠানো থেকে তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ, তখন তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী?
وَلَقَدْ كَذَّبَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ67.18
ওয়ালাক্বাদ কাযযাবাল্লাযীনা মিন কাবলিহিম ফা-কাইফা কানা নাকীর।
বাংলা অনুবাদ: আর অবশ্যই তাদের পূর্ববর্তীরাও অস্বীকার করেছিল। ফলে কেমন ছিল আমার প্রত্যাখ্যান (এর শাস্তি)?
أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَافَّاتٍ وَيَقْبِضْنَ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا الرَّحْمَنُ إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ بَصِيرٌ67.19
আওয়ালাম ইয়ারাও ইলাত ত্বাইরি ফাওক্বাহুম ছাফফাতিওঁ ওয়া ইয়াক বিদন মা ইয়ুমসিকু হুন্না ইল্লার রাহমানু, ইন্নাহু বিকুল্লি শাইয়িম বাছীর।
বাংলা অনুবাদ: তারা কি লক্ষ্য করেনি তাদের উপরস্থ পাখিদের প্রতি, যারা ডানা বিস্তার করে ও গুটিয়ে নেয়? পরম করুণাময় ছাড়া অন্য কেউ এদেরকে স্থির রাখে না। নিশ্চয় তিনি সব কিছুর সম্যক দ্রষ্টা।
أَمَّنْ هَذَا الَّذِي هُوَ جُنْدٌ لَكُمْ يَنْصُرُكُمْ مِنْ دُونِ الرَّحْمَنِ إِنِ الْكَافِرُونَ إِلَّا فِي غُرُورٍ 67.20
বাংলা অনুবাদ: পরম করুণাময় ছাড়া তোমাদের কি আর কোন সৈন্য আছে, যারা তোমাদেরকে সাহায্য করবে ? কাফিররা শুধু তো ধোঁকায় নিপতিত।
أَمَّنْ هَذَا الَّذِي يَرْزُقُكُمْ إِنْ أَمْسَكَ رِزْقَهُ بَلْ لَجُّوا فِي عُتُوٍّ وَنُفُورٍ67.21
বাংলা অনুবাদ: অথবা এমন কে আছে, যে তোমাদেরকে রিয্ক দান করবে যদি আল্লাহ তাঁর রিয্ক বন্ধ করে দেন? বরং তারা অহমিকা ও অনীহায় নিমজ্জিত হয়ে আছে।
أَفَمَنْ يَمْشِي مُكِبًّا عَلَى وَجْهِهِ أَهْدَى أَمَّنْ يَمْشِي سَوِيًّا عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ67.22
বাংলা অনুবাদ: যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখের উপর ভর দিয়ে চলে সে কি অধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত নাকি সেই ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরল পথে চলে ?
قُلْ هُوَ الَّذِي أَنْشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَا تَشْكُرُونَ67.23
কুলহুওয়াল্লাযী আনশায়াকুম ওয়া জাআলা লাকুমুস সামআ’ ওয়াল আবছারা ওয়াল আফয়িদাহ, ক্বালীলাম মাতাশকুরূন।
বাংলা অনুবাদ: বল, ‘তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তকরণসমূহ দিয়েছেন। তোমরা খুব অল্পই শোকর কর’।
قُلْ هُوَ الَّذِي ذَرَأَكُمْ فِي الْأَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُونَ67.24
কুল হুয়াল্লাযী যারআকুম ফিল আরদ্বি ওয়া ইলাইহি তুহশারূন।
বাংলা অনুবাদ: বল, ‘তিনিই তোমাদেরকে যমীনে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে সমবেত করা হবে’।
وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ67.25
ওয়া ইয়াকুলূনা মাতা হাযাল ওয়া’দু ইন কুনতুম ছাদিক্বীন।
বাংলা অনুবাদ: আর তারা বলে, ‘সে ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।
قُلْ إِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللَّهِ وَإِنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُبِينٌ 67.26
কুল ইন্নামাল ইলমু ইন্দাল্লাহি, ওয়া ইন্নামা আনা নাযীরুম মুবীন।
বাংলা অনুবাদ: বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই নিকট। আর আমি তো স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’।
فَلَمَّا رَأَوْهُ زُلْفَةً سِيئَتْ وُجُوهُ الَّذِينَ كَفَرُوا وَقِيلَ هَذَا الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تَدَّعُونَ67.27
বাংলা অনুবাদ: অতঃপর তারা যখন তা আসন্ন দেখতে পাবে, তখন কাফিরদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে এবং বলা হবে, ‘এটাই হল তা, যা তোমরা দাবী করছিলে’।
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَهْلَكَنِيَ اللَّهُ وَمَنْ مَعِيَ أَوْ رَحِمَنَا فَمَنْ يُجِيرُ الْكَافِرِينَ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ67.28
কুল্ আরাআইতুম্ ইন আহলাকানিয়াল্লাহু ওয়ামান মামিয়া আও রহিমানা ফামাইঁ ইউজীরুল কাফিরীনা মিন ‘আযাবিন আলীম।
বাংলা অনুবাদ: বল, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি’? যদি আল্লাহ আমাকে এবং আমার সাথে যারা আছে, তাদেরকে ধ্বংস করে দেন অথবা আমাদের প্রতি দয়া করেন, তাহলে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে কে রক্ষা করবে’?
قُلْ هُوَ الرَّحْمَنُ آمَنَّا بِهِ وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْنَا فَسَتَعْلَمُونَ مَنْ هُوَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ67.29
কুল হুওয়ার রহমানু আমান্না বিহী ওয়া আলাইহি তাওয়াক্কালনা ফাসাতা’লামূনা মানহুয়া ফি দ্বালালিম মুবীন।
বাংলা অনুবাদ: বল, ‘তিনিই পরম করুণাময়। আমরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করেছি। কাজেই তোমরা অচিরেই জানতে পারবে কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে’?
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَأْتِيكُمْ بِمَاءٍ مَعِينٍ 67.30
কুল আরাআইতুম ইন আছবাহা মা-উকুম গাওরান ফামাইঁ ইয়াতীকুম বিমা ইম মাঈন।
বাংলা অনুবাদ: বল, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভে চলে যায়, তাহলে কে তোমাদেরকে বহমান পানি এনে দিবে’ ?
নামকরণ
এই সূরাটির প্রথম আয়াতের تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ বাক্যাংশের الْمُلْكُ অংশ থেকে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে; অর্থাৎ, যে সূরার মধ্যে الملك (‘মুলক’) শব্দটি আছে এটি সেই সূরা।
নাযিল হওয়ার সময় ও স্থান
এ সূরাটি কোন সময় নাযিল হয়েছিলো তা কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায় না। তবে বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভংগী থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সূরাটি মক্কী জীবনের প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরাসমূহের অন্যতম।
শানে নুযূল
এ সূরাটিতে একদিকে ইসলামী শিক্ষার মূল বিষয়সমূহ তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে যেসব লোক বেপরোয়া ও অমনোযোগী ছিল তাদেরকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে সজাগ করে দেয়া হয়েছে। মক্কী জীবনের প্রথম দিকে নাযিল হওয়া সূরাসমূহের বৈশিষ্ট হলো, তাতে ইসলামের গোটা শিক্ষা ও রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী করে পাঠানোর উদ্দেশ্য সবিস্তারে নয় বরং সংক্ষেপ্তভাবে বর্ণন করা হয়েছে। ফলে তা ক্রমান্বয়ে মানুষের চিন্তা-ভাবনায় বদ্ধমূল হয়েছে। সেই সাথে মানুষের বেপরোয়া মনোভাব ও অমনোযোগিতা দূর করা, তাকে ভেবে চিন্তে দেখতে বাধ্য করা এবং তার ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।প্রথম পাঁচটি আয়াতে মানুষের এ অনুভূতিকে জাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, যে বিশ্বলোকে সে বাস করছে তা এক চমৎকার সুশৃংখ ও সুদৃঢ় সাম্রাজ্য। হাজারো তালাশ করেও সেখানে কোন রকম দোষ-ত্রুটি , অসম্পূর্ণতা, কিংবা বিশৃংখলার সন্ধান পাওয়া যাবে না। এক সময় এ সাম্রাজ্যের কোন অস্তিত্ব ছিল না। মহান আল্লাহই একে অস্তিত্ব দান করেছেন , এর পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও শাসনকার্যের সমস্ত ইখতিয়ার নিরংকুশভঅবে তারই হাতে। তিনি অসীম কুদরতের অধিকারী। এর সাথে মানুষের একথাও বলে দেয়া হয়েছে যে, এ পরম জ্ঞানগর্ভ ও যুক্তিসংগত ব্যবস্থাসঙ্গত ব্যবস্থার মধ্যে তাকে উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করা হয়নি। বরং এখানে তাকে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে। তার শুধু সৎকর্ম দ্বারাই সে এ পরীক্ষায় সফলতা লাভ করতে সক্ষম।
আখেরাতে কুফরীর যে ভয়াবহ পরিণাম দেখা দেবে ৬ থেকে ১১ নং আয়াতে তা বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তাঁর নবীদের পাঠিয়ে এ দুনিয়াতেই সে ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সামাধান করে দিয়েছেন। এখন তোমরা যদি এ পৃথিবীতে নবীদের কথা মনে নিয়ে নিজেদের আচরণ ও চাল-চলন সংশোধন না করো তাহলে আখেরাতে তোমরা নিজেরাই একথা স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে, তোমাদের যে শাস্তি দেয়া হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তোমরা তার উপযোগী।
১২থেকে ১৪ নং আয়াতে এ পরম সত্যটি বুঝানো হয়েছে যে, স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে বেখবর থাকতে পারেন না। তিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য প্রত্যেকটি কাজ ও কথা এমনকি তোমাদের মনের কল্পনাসমূহ পর্যন্ত অবগত। তাই নৈতিকতার সঠিক ভিত্তি হলো, মন্দ কাজের জন্য দুনিয়াতে পাকড়াও করার মত কোন শক্তি থাক বা না থাক এবং ঐ কাজ দ্বারা দুনিয়াতে কোন ক্ষতি হোক বা না হোক , মানুষ সবসময় অদৃশ্য আল্লাহর সামনে জবাবদিহির ভয়ে সব রকম মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবে। যারা এ কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করবে আখেরাতে তারাই বিরাট পুরস্কার ও ক্ষমালাভের যোগ্য বলে গণ্য হবে।
১৫ থেকে ২৩ নং আয়াতে পরপর কিছু অবহেলিত সত্যের প্রতি ইংগিত দিয়ে সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার আহবান জানানো হয়েছে। এগুলোকে মানুষ দুনিয়ায় নিত্য নৈমিত্তিক সাধারণ ব্যাপার মনে করে সন্ধানী দৃষ্টি মেলে দেখে না। বলা হয়েছে, এ মাটির প্রতি লক্ষ্য করে দেখো। এর ওপর তোমরা নিশ্চিন্তে আরামে চলাফেরা করছো এবং তা থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় রিযিক সংগ্রহ করছো। আল্লাহ তা’আলাই এ যমীনকে তোমাদের আনুগত করে দিয়েছেন। তা না হলে যে কোন সময় এ যমীনের ওপর ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে তা তোমাদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে। কিংবা এমন ঝড়- ঝাঞ্চা আসতে পারে যা তোমাদের সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দেবে। মাথার ওপরে উড়ন্ত পাখীগুলোর প্রতি লক্ষ করো। আল্লাহই তো ওগুলোকে শূন্যে ধরে রাখেন। নিজেদের সমন্ত উপায়-উপকরণের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ করে দেখো। আল্লাহ যদি তোমাদের শাস্তি দিতে চান তাহলে এমন কে আছে, যে তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারে? আর আল্লাহ যদি তোমাদের রিযিকের দরজা বন্ধ করে দেন, তাহলে এমন কে আছে, যে তা খুলে দিতে পারে? তোমাদেরকে প্রকৃত সত্য জানিয়ে দেয়ার জন্য এগুলো সবই প্রস্তুত আছে। কিন্তু এগুলোকে তোমরা পশু ও জীব-জন্তুর দৃষ্টিতে দেখে থাকো। পশুরা এসব দেখে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মানুষ হিসেবে আল্লাহ তোমাদেরকে যে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি এবং চিন্তা ও বোধশক্তি সম্পন্ন মস্তিষ্ক দিয়েছেন , তা তোমরা কাজে লাগাও না। আর এ কারণেই তোমরা সঠিক পথ দেখতে পাও না।
২৪ থেকে ২৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, অবশেষে একদিন তোমাদেরকে নিশ্চিতভাবে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। নবীর কাজ এ নয় যে, তিনি তোমাদেরকে সেদিনটির আগমনের সময় ও তারিখ বলে দেবেন। তার কাজ তো শুধু এতটুকু যে, সেদিনটির আসার আগেই তিনি তোমাদের সাবধান করে দেবেন। আজ তোমরা তার কথা মানছো ন। বরং ঐ দিনটি তোমাদের সামনে হাজির করে দেখিয়ে দেয়ার দাবী করছো। কিন্তু যখন তা এসে যাবে এবং তোমরা তা চোখের সামনে হাজির দেখতে পাবে তখন তোমরা সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে।
২৮ থেকে ২৯ নং আয়াতে মক্কার কাফেরদের কিছু কথার জবাব দেয়া হয়েছে। এসব কথা তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সংগী-সাথীদের বিরুদ্ধে বলতো। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অভিশাপ দিতো এবং তাঁর ও ঈমানদারদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য বদ দোয়া করতো। তাই বলা হয়েছে যে, তোমাদেরকে সৎপথের দিকে আহবানকারীরা ধ্বংস হয়ে যাক বা আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করুক তাতে তোমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন কি করে হবে? তোমরা নিজের জন্য চিন্তা করো। আল্লাহর আযাব যদি তোমাদের ওপর এসে পড়ে তাহলে কে তোমাদেরকে রক্ষা করবে? যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং যাঁরা তাঁর ওপরে তাওয়াক্কুল করেছে তোমরা মনে করছো তারা গোমরাহ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন প্রকৃত গোমরাহ কারা তা প্রকাশ হয়ে পড়বে।
অবশেষে মানুষের সমানে একটি প্রশ্ন রাখা হয়েছে এবং সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে দেখতে বলা হয়েছেঃ মরুভূমি ও পবর্তময় আরবভূমিতে যেখানে তোমাদের জীবন পুরোটাই পানির ওপর নির্ভরশীল, পানির এসব ঝরণা ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছে। এসব জায়গায় পানির উৎসগুলো যদি ভুগর্ভের আরো নীচে নেমে উধাও হয়ে যায় তাহলে আর কোন শক্তি আছে, যে এই সঞ্জীবনী -ধারা তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারে?
Leave a comment