বৈঠক বা হাঁটুগেড়ে বসা (আরবি: جِلسة ও قعدة অথবা جلوس ও قعود) হল নামাযের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুসলিমরা প্রতি দুই রাকাত নামাজে মাথা নত করবার (রুকু, সিজদা) পর হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে তাশাহহুদ পাঠ করেন। দুই রাকাতবিশিষ্ট নামাজের শেষে বৈঠক করা ফরজ এবং চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের প্রথম দুই রাকাতের পর বৈঠক করা ওয়াজিব এবং শেষের বৈঠক ফরজ।
বৈঠকে বসার ধরন
নবি মুহাম্মাদ কীভাবে বৈঠকে বা হাঁটু গেড়ে বসতেন হাদিসে তার তিনটি ধরন বা পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়:
- পশ্চাদ্দেশকে পায়ের গোঁড়ালির উপর রেখে আরামে হাঁটু গেড়ে বসা।
- পশ্চাদ্দেশকে বাম পায়ের গোঁড়ালির উপর রেখে হাঁটু গেড়ে আরামে বসা এবং ডান পায়ের পাতাকে এমনইভাবে খাড়া করে রাখা, যাতে পায়ের আঙ্গুল সংলগ্ন পাতার গোলীয় অংশ মাটিকে স্পর্শ করে থাকে পায়ে আঙ্গুল সামনের দিকে কিছুটা নুয়ে থাকে।
- পশ্চাদ্দেশের ডান ও বাম অংশের দিকে বন্ধ রেখে উভয় পায়ের উপরে মেঝেতে আরাম করে বসা, ডান পায়ের গোঁড়ালি মেঝের দিয়ে নুয়ে থাকতে পারে বা খাড়া থাকতে পারে। এটি নামাজের শেষাংশে সম্পাদিত হয়।
ইমাম আবু হানিফার মতে, নামাজ দুই রাকাতই হোক বা চার রাকাতই হোক, উভয় আবস্থাতেই পায়ের পাতার উপর বসতে হবে। ইমাম মালিকের মতে, উভয় অবস্থায় (দুই/চার রাকাত) পা একদিকে বের করে দিয়ে বসতে হবে। ইমাম শাফির মতে, যদি দুই রাকাতবিশিষ্ট নামাজ হয়, তবে দ্বিতীয় তথা শেষ রাকাতে পা বিছিয়ে দিয়ে বসতে হবে, আর যদি নামাজ দুই রাকাতের বেশি হয়, তবে দ্বিতীয় রাকাতে পায়ের পাতার উপর বসতে হবে।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
একটি নামাজে সর্বোচ্চ দুইবার বসা যায়। চার রাকাত নামাজে প্রথম দুই রাকাত শেষে প্রথম বৈঠক এবং শেষ দুই রাকাত শেষে বসাকে শেষ বা চূড়ান্ত বৈঠক বলে। প্রত্যেক বৈঠকে তাশাহহুদ পড়তে হয়।
দ্বিতীয় বৈঠকে তাশাহুদ পড়ার সময় শাহাদাত আঙুল ক্বিবলার দিকে তোলা হয় যা মক্কার দিক নির্দেশ করে, তবে এই কাজটি ঐচ্ছিক।
শেষ রাকাতে বসা অবস্থায় প্রথমে ডান দিকে এবং তারপর বাম দিকে তাসলিম বা আস্-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ্ বলার মাধ্যমে নামাজ শেষ করা হয়।
মৌখিক পাঠসমূহ
ইসলামের আল্লাহর পরম একত্ববাদ ও মুহাম্মাদের ঐশ্বরিক প্রেরণ/নবুয়তের সাক্ষ্য সম্বলিত একটি প্রার্থনা বৈঠককালে পাঠ করা হয়, যা তাশাহহুদ নামে পরিচিত। সুন্নিদের মাঝে তাশাহহুদ এর সূচনাসূচক শব্দাংশ “আত্-তাহিইয়াতু” নামেও পরিচিত এবং এটি নবি ও আল্লাহর “সকল ধার্মিক বান্দাদের” জন্য সকল উপাসনা ও প্রার্থনার একমাত্র উদ্দেশ্য হিসাবে ঐশ্বরিক প্রতিজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করে।
আয়াতুল্লাহ সিস্তানি প্রদত্ত শিয়া সংস্করণটি হলো, “আশ্ হাদু আন্ লা ইলাহা ইল্লাল্ লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা লাহ্, ওয়া আশ্ হাদু আন্না মুহাম্মাদান্ ‘আব্দুহু ওয়া রাসুলুহ্, আল্লা হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া আলিহ্ মুহাম্মাদ্”। আর কেউ তাশাহহুদ এভাবে পাঠ করলেও তা যথেষ্ট হবে: আশ্ হাদু আন্ লা ইলাহা ইল্লাল্ লাহু ওয়া আশ্ হাদু আন্না মুহাম্মাদান্ সাল্লাল্ লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি আব্দুহু ওয়া রাসুলুহ্।
দুরুদে ইব্রাহিম
শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের সঙ্গে একটি সুপারিশকৃত দুরূদ পাঠ করা হয়, যা “দুরুদে ইব্রাহিম” বা আরবিতে সালাওয়াত নামে পরিচিত:
-
- اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيم، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
- আল্লাহুম্মা সাল্লি ʿআলা মুহাম্মাদি(ন্)-ও্ঁ-ওয়াঁ-ʿআলা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা সাল্লাইতা ʿআলা ইব্রাহিমা ওয়া-ʿআলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদু(ন্)-ম্-মাজিদ্(উন্), আল্লাহুম্মা বারিকা ʿআলা মুহাম্মাদি(ন্)-ও্ঁ-ওয়াঁ-ʿআলা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা বারাক্তা ʿআলা ইব্রাহিমা ওয়া-ʿআলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদু(ন্)-ম্-মাজিদ্(উন্)
- “হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের প্রতি শান্তি প্রেরণ করুন যেভাবে আপনি ইব্রাহিম ও ইব্রাহিমের পরিবারের প্রতি শান্তি প্রেরণ করেছিলেন। নিঃসন্দেহে আপনি সর্বাপেক্ষা প্রশংসিত, সর্বোত্তম; হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের প্রতি আশীর্বাদ প্রেরণ করুন যেভাবে আপনি ইব্রাহিম ও ইব্রাহিমের পরিবারের প্রতি আশীর্বাদ প্রেরণ করেছিলেন। নিঃসন্দেহে আপনি সর্বাপেক্ষা প্রশংসিত, সর্বোত্তম।”
আয়াতুল্লাহ সিস্তানি প্রদত্ত শিয়া সংস্করণটি হলো “আস্সালামু ‘আলাইকা আইইয়ুহান্ নাবিইয়ু ওয়া রাহ্মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্। আস্সালামু আলাইকুম্।” বিকল্পভাবে, “আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদি ল্লাহিস্ সালিহিন্। আস্সালামু আলাইকুম্”
Leave a Reply